
Literary Collection of SHYAMAL BISWAS, veteran poet & writer
…………………………………………………………………..
For publication of your creative composition like poem, story, painting, achievement, any article, pl. post here – 9339228087, 6289583507.
For news coverage here or in various newspapers, web & TV Channels, Ph- 9339228087, 6289583507 *Asish Basak* hellokolkata1@gmail.com

Veteran poet SHYAMAL BISWAS received LCSF Memento and Book during HELLO KOLKATA LIVE.
কবিতা : রাগ করোনা
কলমে :- শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ ২২/০৬/২০২৫
তুমি চলে যাবে কখনো ভাবি নি,
হৃদয়ে বসন্তের গুণ গুণে রানী।
সারাক্ষণ তুমি বড় অভিমানী,
চুপচাপ থাকো মন মরা তবুও ডাকি নি।
বার বার বলা তোমারে কত কসরত,
হুঙ্কার দিলেও কখনো গলে না বরফ।
জবা ফুলের চোখে আছে গম্ভীর রাগে,
অভিশাপের ফুল ঝুরি সে আছে বাগে।
হারিয়ে যেও না কখনো মানুষের অরণ্যে,
ধোঁয়া তুলসী পাতার জলে ভিজে বন্য।
পথ চলার নাই তো কোনো শেষ,
ধরনীর সাথে শুধু একটুখানি আপোষ।
সোজা পথে থাকে না কোনো আনন্দ,
বাঁকা পথে পথে ভরা খানাখন্ধ।
তবুও আনন্দের মাঝে খূশির আনন্দ,
আছে বলেই হই না কখনো নিরানন্দ।
শোনো ওই বসন্তের কোকিলা,
তোমার মন কেন হয় এত উতলা।
ছেড়ে দাও কোথাও যাওয়ার আশা,
চুপচাপ মনে বাঁধে নৈরাজ্যের বাসা।
—-+—->>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
ছোট গল্প :- সুস্থতা
– শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ :- ১২ জুন,২০২৫
কালকে দিনটা ছিল বলতে গেলে মেঘাচ্ছন্ন। আকাশ ছিল কখনো বাদলে ঘেরা। কখনো মেঘেদের দোড়ঝাঁপ। পাল তুলে দূর দেশে পাড়ি দেওয়া। কখনো রিমঝিম বৃষ্টি আবার কখনো ঝিরঝিরে শ্রাবনের বৃষ্টি ধারা। সূর্যের ছিল না কোন উঁকিঝঁকি। আকাশের গায়ে ছিল শুধু কখনো রামধনুর হঠাৎ হঠাৎ দর্শন।
সকাল বলতে পাঁচটার চলে যেতাম রোজকার মতো ঢাকুরিয়া পার্কে যেমন রোজ যাই। চলার পথে আমার থাকে সাথে সবসময় একটা কবি কবি চেহারার একটা ব্যাগ। তাতে থাকে একটা জলের বোতল, আরো কিছু উপাদান যেমন চারটা মেরি গোল্ড বিস্কুট। আর তা সাথ দিতে থাকে আট দশটা কপিকো টফি, জীবন দায়ী অসুধ হিসেবে। সেখানে যোগ হয়েছে এই বর্ষাকালীন একটা ছাতা। কিন্তু ওদিন ছাতা নিতে ভুলে গেলাম।
তাই দূর্গা দূর্গা বলে চলে গেলাম ঢাকুরিয়া পার্কে। যদিও বৃষ্টি হলেইও খুব একটা অসুবিধা হয় নাই।
সাথে ছিলেন আমাদের কমপ্লেক্সের ডাক্তার সাহেব, সব সময় আমার আমার প্রেরণাও দায়ক। । ওনার সাথে সেদিন ছিল ছাতা। ওনার তার ভরসায় এক সময় পৌঁছালাম পার্কে। ওই সকালে বৃষ্টি বড় ফোটার ছিল না।
এদিনটা মনে হয় আমার ছিল না। ঘুরে এসে গেলাম বাজারে কিছু টুকিটাকি কিনতে । দূপুর এক সময় গড়িয়ে এল। মনটা যেন কেমন কেমন করছে। আমার সাথ দিচ্ছে না। অনুভব করলাম দিনটা আজ আমার না। শরীরে ভিতর একটা আলোড়ন খেলে যাচ্ছে বুঝতে পারলাম। শরীরে কিছু একটা হচ্ছে। হালকা হালকা গা ব্যাথা । গুরুত্ব দিলাম না। দূপুরে খাওয়ার একটা
ভাত ঘুম রোজকার মতো শুতে গেলাম। ওই যে বললাম রোজকার ওই দিনটা আমার ছিল না। এখন ইন্ডিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে তার দেখা একটা নেশা ছিল। তা বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করার পরও ঘুম হলো না
চারটের পর থেকে শরীরে ব্যাথা বেড়ে গেল। হালকা হালকা একটু জ্বর এলো। সেই সাথে লেথারজিক ভাবটা বেশ আঁকড়ে ধরলো। বিকেলে টিভির সংবাদ দেখতাম। তাও আজ বন্ধ।
কি করি ভাবলাম কবিতা লিখি বা গল্প লিখি। কলম বলল আজ আমার মুড নাই। সে ইচ্ছা করে এক পাশে শুয়ে থাকল। আর বারবার আরাম করে নিঃশাস প্রশ্বাস নিতে দেখলাম।। মনে হলো যেন বলল তোমার আজ মন ঠিক নাই। আমি তোমার সাথ দেব না।
মন খারাপ হলে কবিতার লাইনগুলো ঠিক আর আসে না। আমার একটা অভ্যাস আছে কবিতার প্রেরণার জন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনা। তাতেও মন দিতে পারনাম না।
ওই যে শরীর আজ আমার সাথে নাই। দিনটাও আমার ছিল না। রাতে কি খেছিলাম মনে করতে পারছি না। এইটুকুই মনে আছে অনেক কম খাবার খেয়েছিলাম। রোজকার রাতের মতন আর অসুধ ও আর খাওয়া হল না। লেথারজিক ভাব ও হালকা জ্বর ও গা ব্যাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম। আগে তো শুয়ে পড়ি।
সাধারণত রাতে বারোটার আগে শুই না। কিন্তু আজ শুয়ে পড়লাম সাড়ে দশটার সময়। একবার মনে মনে ভাবলাম রাতটা ঠিক যাবে তো! চলে গেলায ঘুমের দেশে। আর কিছু মনে নাই। ঠিক চারটার সময় ভোরে উঠলাম। ওটা যেন রোজকার মতো সকালে ওঠা।
সকালটা যে কিছু একটার ঘটনা আমার কি অপেক্ষা করছিল। ওঠেই দেখি ফ্যান ও এসি বন্ধ মানে এক্কেবারে বন্ধ হবে ভাবতে পারি নাই। খবর নিয়ে জানতে পারলাম রাত বারোটার পর থেকে তিনটা এসি ও সব কয়টা ফ্যান বন্ধ। মানে ঘরে পাওয়ার ছিলো না।
আরও কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করে ছিল।
বাড়ির লোকেরা কোন প্রতিকারের রাস্তা দেখতে না পেয়ে আমাদের কমপ্লেক্সের জানাশোনা ইলেকট্রশানকে ফোন করে। কয়বার রিং করার পরে সে ফোন উঠালো না তার মোবাইলতার হাতে।
অগত্যা ফোন করে সি ই এস সি কে ওই রাতেই ডাকলো।
ওরা অন্তদন্ত করে করে চার পাঁচ জনের একটা দল এলো। ওরা চেষ্টা চরিত্র করে এসে জানালো আপনাদের মিটার ঠিক আছে। আর এটা ইন্টারনাল প্রব্লেম। ওটা ওদের একতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
সকালে উঠেই আমি ফোন করি আর এক জানাশুনা ইলেকট্রিয়ানকে। ওই সকালে তা আটটার সময় এসে সব চেক করে জানালো এম সি টা জ্বলে গেছে।
ও জানালো ও চলে যাচ্ছে পরে দোকান খুললে ওগুলো নিয়ে আসবে। ওর একটা জানাশুনা দোকানদারকে অনেক অনুরোধ করে সকালে সাড়ে নয়টায় খুলাল। তার সাথে কিছু অন্যান্য কিছু পেন্ডডিং কাজ করে দিল।
এর মধ্যেই দুই নাতি নাতনিকে খবরের কাগজ দিয়ে হাওয়া দেওয়া শুরু হলো। পরে বেলা হলে খুঁজে একটা হাত পাখাও পাওয়া গেল। বাচ্চারা খুশি হাওয়া পেয়ে। আর এই হাত পাখা ছিল তাদের এক নতুনত্ব। তারা দু’জনে সবাইকে হাওয়া দেওয়া করতে থাকলো। হাত পাখা পেয়ে যার পর নাই ওরা খুশি। ব্যপারাটা ওদের মজার মনে হলো। কারণ কখনো হাত পাখা দেখে নাই।
প্রথমে ইলেকট্রিকশিয়ান আগে এসেই ফ্যানের ব্যবস্থা করল।
কোথায় যেন হারিয়ে গেল আমার জ্বর ও গায়ের ব্যাথা। তার পর এ সির কাজ করতে করতে প্রায় বারোটা হয়ে গেল।
এই ঘটনা শুনে আমার বারে বারে রবিঠাকুরের ওই সেই গানটা আমার বারে বারে আমার মনে এল।
” মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চির দিন কেন পাই না।
কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে,
তোমায় দেখিতে পাই না।”
— সমাপ্ত —- সংগৃহিত
……………………………………………………………………………
কবিতা : ভালো বাসাবাসি
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ২৫/০৬/২০২৫
সব বদলে গেছে আজ বয়সের ভারে,
আজ আমি তাই ভিড়েছি ওদের দলে।
শুরু রোজ রোজ হাটাহাটি সকালে,
থামি আমি সাড়ে তিন কিলো মিটারে।
হাতে ওঠে আমার রোজকার বাজার,
বাজার নিয়ে চলা যেন বাড়তি বোঝা।
দৌঁড়ে এসে নানটু হাতে নিয়ে করে মজা,
একটুখানি মজায় মুখ বড় বেজার।
অপারগ শরীরে উঠি নড়বড়ে রিক্সায়,
ওই আমার একমাত্র সাহারা ভরসা।
সে চালায় রিক্সা লক্ষ্য আমার বাসা,
নানটুর বয়সও প্রতিফলিত তার রিক্সায়।
বদলে গেল আবাল্য পেয়েছি বৃদ্ধের সাড়া,
শরীরে ব্যাথা জেগেছে পুরানো কথা।
এসেছে আরব্য রজনীর শত শত কথা,
বারে বারে আসে সাহারার রিক্সার কথা।
বাড়িতে আছি আমরা দু’জনে বুড়োবুড়ি,
আমি একমাত্র সাহারা পড়শি আমার।
তারা আজ আছে দূরে দূরে বহুদূর,
আমরা আছি দু’জনে ফেলে কানাকড়ি।
ভরসা থাকলেও চলি ভালোবাসায়,
বিপদে চলি দু’জনে আমরা পাশাপাশি।
লিখতে পড়তে আমরা ভালোবাসি,
অলিক স্বপ্নে সময় চলে গল্প কবিতায়।
—-+—-……………….._____________________………………….
কবিতা : সে চোখ দু’টি
-শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ০৭/০৭/২০২৫
খুঁজি তারে আমি মানুষের ভীড়ে,
সে চোখ দুটিরে।
হারিয়ে গেছে অনেক দিন আগে,
এক যোজনা দূরে।
আমি আজও ভালো বাসি তারে,
বেসেছিলাম দিন ধরে।
দেখি তারে আমার চোখের ভিতরে,
বাস্তবে দেখিনা তারে।
কেন এমন করে মনের ভিতরে,
কখনো স্বপ্নের ঘরে।
কখনো আঁধার রাতে তারার মাঝে,
ঊষার ঘাসের উপরে।
হৃদয়ে রেখেছি ধরে গোপনে তারে,
কখনো উদ্ভাসিত ভোরে।
লুকোচুরির খেলায় কোথায় হারিয়ে,
আবার আসে ফিরে।
বুঝল না সে কখনো আমারে,
পথিকের পথ ধরে।
চলে গেল একদিন সীমানা ছেড়ে,
ছেড়ে আপন ভাবনারে।
অপেক্ষায় থাকি তার ফিরে আসার,
এই বুঝি এল দ্বারে।
বলল সেদিন ফিসফিস করে,
আমি আছি তোমার তরে।
হারাই না কখনো দূরে সরে,
আসিব ওপথে ফিরে।
সর্বদা আছি আমি তোমার সনে,
দেখতে পাওনা নজরে।
আসার পথে পথে দেখবে আমারে,
ঝড় ঝঞ্ঝা রাতে আঁধারে।
—-+—-
……………………………………………………………….
ছোট গল্প: কোথায় তুমি
–শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ১৮/০৭/২০২৫
চঞ্চালক দাসগুপ্ত, প্রীতম ও মিমি তাদের মার শেষ কাজ দাহ করে শ্মশান থেকে বের হলো। মিমি ও প্রীতমের চোখে এখনো চোখে জল। চোখগুলো জবা ফুলের মতো। প্রীতম আর মিমি ছিল মার বড় ভক্ত। রবিবার ছাড়া তারা বাবাকে কখনো পেত না। যদিও মিমি ছিল বাবার দলে। আবার প্রীতম ছিল মার দলে। ওরা এখন দু”জনে জীবনে প্রতিষ্ঠিত। মিমির বিয়ে হয়েছে পাড়াতে আর প্রীতম ভুপালে। তারপর ওরা ওদের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত।
মোমিতা ওদের পড়ার জন্য কি না ত্যাগ স্বীকার করেছে।
সঞ্চালক চলে যেত অফিসে সকাল আটটার সময়। আসত প্রায় রাত নয়টার সময়। ওদের বাড়ি ছিল বনগাঁ, ইছামতি নদীর কুলে। ট্রেনে যেত শিয়ালদা। তারপর ট্রামে করে ডালহৌসি। আনেকটা সময় লেগে যেত। সদাগরী অফিস। অনেক খাটতে হতো। সেই রকম পয়সাও ভাল ছিল। পুরো অফিস ছিল ওর একার তত্বাবধানে।
ছিল মোটে দশটা লোক। এখন দুই শত লোকের সমারহ। ছিল ব্যবসা দেশের ভিতরে।এখন সেখানে ইমপোর্ট ও এস্কপোর্ট ব্যবসা। তার মুলে ছিল সঞ্চালক।
এখন সে কম্পানির ম্যানেজার তার পয়সা ছিল বিশল অঙ্কের। সর্বোক্ষণে জন্য একটা ছিল গাড়ি।
ছিল ইছামতির পারে। চলে এল কলকাতায়। ছিল কম্পানির কোয়াটারে। চারটা রুম। বেশ বড় বড়। যেটা ছিল দুরুহ ও তার ভাবনার বাইরে।
দু’জনে সেই ক্লাস দু থেকে এক সাথে পড়াশোনা। পরে হাই স্কুলেও এক সাথে। একই স্কুলে পড়া। শেষে একই কলেজে। ইউনিভার্সিটিতে ও এক সাথে হলেও। প্রীতম এম কম ও মোমিতা এম এ নিয়ে পড়া শুরু করে। ওদের মাষ্টার্স ডিগ্রী শেষ হতেই প্রীতম একটা সদাগর অফিসে চাকরি পেয়ে গেল। মমিতা তো খুশী। নিজের একটা স্বত্ব হয়েছে বলে। ততক্ষণে কোলে এসে গেছে প্রীতম।
এম এ পড়তে পড়তে ওরা বিয়ে করে বিয়ে ছিল।
সঞ্চলক যখন চাকরি পেয়ে গেল তখন একদিন বলল মমিতাক একটা চাকরি করতে।
— না আমার চাকরি করা হবে না। আমার পেটে এসে গেছে তোমার সন্তান। আমি ওকে তোমার মতো করে গড়ে পিঠে করে মানুষ করব। পরে এসে গেল মিমি। যেটুকু পড়ার ইচ্ছা তার ও জলাঞ্জলি হয়ে গেল। মমিতার আর চাকরি করা হলো না। পুরো সংসারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে চাপলো।
সকালে সঞ্চালককে অফিসে পাঠানো। সাথে টিফিন বানানো। মমিতাকে সাহায্য করার জন্য ছিল চব্বিশ ঘন্টার জন্য একটা মেয়ে। সঞ্চালককে ছেড়ে দৌঁড়াতো প্রীতম ও মিমির স্কুলের দিকে। ওরা এত ছোটো তাই নিজে ছেড়ে আসত। আবার নিয়ে আসত। তারপর আবার সঞ্চালকের প্রায়ই অফিসের কাজে বাইরে যেতে হতো।
সঞ্চালকের এক দিন একটা খটকা লাগল। সঞ্চালক ও মমিতা দুই জনেই একই সঙ্গে প্রাইমারি থেকে বারো ক্লাসে পড়তো প্রতিবার সঞ্চারক প্রতিবারই প্রথম হতো। মমিতার ও ক্ষমতা ছিল কিন্তু তার প্রথম হওয়ার সব গুণ থাকা স্বত্বেও চেষ্টা করে নাই। এখদিন সে কথা ও একবার ওদের অঙ্ক টিচারকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল প্রতি অঙ্ক পরীক্ষায় মমিতা সব করার পরে শেষে একটা অঙ্ক সে কেটে দিত। তাদের দু’জনের নম্বরে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। একদিন প্রীতম ও মিমির বিয়ের পরে সঞ্চালক মমিতাকে বলল
— মমিতা তোমার মধ্যে সব গুন্য থাকা স্বত্বেও কেন তুমি পরীক্ষায় কেন প্রথম হও নাই। কি একটু আমাকে বলবে?
ও একটা দায়সারা উত্তর দিত।
— আমি পারতাম না। তাই কগনো প্রথম হতে পারি নাই!
পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়লো মমিতার উপর। দুই জনের বয়স ও হয়েছে।
সঞ্চালক কখনো কখনো কখনো সেই পুরানো কথা মনে করতো। মমিতা সংসারের সকলের দায়ভার একা নিত। পুরো সংসারে জন্য জামা কাপড় ও সে কিনত।
কখনো সঞ্চালক পূজার সযয় এলে একা বাজারে গিয়ে মমিতার জন্য দু’খানা দামী শাড়ি কিনে আনতো। কারণ মমিতা নিজের জন্য কখনো ভাল শাড়ি কিনতো না। এমন কি সঞ্চালকের জন্য ও রেডিমেড প্যান্ট শার্ট কিনে আনতো। অবশই সাথে করে সঞ্চালকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। সঞ্চালকের মনে আছে ও যখন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হলো। তখন মাইনেও অনেক বেড়েছে। সঞ্চালকে কোট প্যান্ট নিজেই কিনে দিল। পছন্দ না হলে বলত ঠিক হচ্ছে না। ঠিক মতো ফিট না হলে অন্যটা দেখতো।
আজ সঞ্চালক আর নাই। কয় দিন হলো ওকে ছেড়ে পরপারে চলে গেছে। তাই ছেলে মেয়ের সাথে মিলে প্রতি বছর সঞ্চালকের জন্মদিন ও মৃত্যু দিবস পালন করত।
সঞ্চালক মরে গেলে ওর অফিস থেকে এক ভদ্রলোক এসে করজোড়ে মমিতাকে বলল। ম্যাডাম আমাদের ডাইরেকটর সাহেব আপনাকে আগামী কাল অফিসে ডেকেছেন। আপনি দয়া করে আসবেন। আর আপনাকে নিতে কম্পানি গাড়ি আসবে। কাল সাড়ে এগারোটার সময়। আপনি অবশ্যই আসবেন। আপনি না এলে আমার কপালে ভোগান্তি আছে।
পরের দিন মমিতা অফিসে যাওয়ার সময় দেকল। গাড়িটা ফুলে সাজোনো। অফিসে দেখল গেটও সুন্দর করে সাজিয়েছে। আরও অবাক হলো অফিস দেখে।বিশাল অফিস। আট তলার বিল্ডিং।
ওকে সাত তলায় অফিসের লোক সাথে করে লিপ্টে নিয়ে গেল। ঢুকেই যার পর নাই আরও অবাক হলো। পুরো ফ্লোরটা সাজিয়ে অপূর্ব পরিপাটি করে সাজানো। কোথাও কোন ত্রুটি রাখে নাই। একজন বেশ সুটবুট টাই পরা একজন বয়ষ্ক লোক মনে হয় ডাইরেক্টর সঞ্চালকের অফিস ঘরে তাকে নিয়ে গেল তাকে।
মমিতা দেখল বিশাল বড় রুম। থরে থরে সাজানো। দরজায় লেখা
সঞ্চালক দাসগুপ্ত
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর
— এখানেই স্যর বসতেন।
টেবিলে দুইটা বড় ফুলদানি। তাতে অসংখ্য লাল সাদা হলুদে গোলাপে ভরা।
চেয়ারের পিছনে সঞ্চালকের বড়ো আকারের একটা ফটো। তাতেও রজনীগন্ধা ফুলের মালা দেওয়া।
পরে নিয়ে গেল মমিতাকে আর একটা বড় হলে। টেবিলে সাজানো পর পর থালা গ্লাস। মনে হলো সব বিদেশী জিনিষ।
পুরো ঘরে লোকে গিসগিস। একজন হঠাৎ মাইক নিয়ে বলল সবাইকে। আপনারা এসে কিছু কিছু স্যর দাশগুপ্তর ব্যাপারে বলুন। তার আগে আসুন আমরা সকলে এক মিনিট স্যরের আত্মার শান্তি কামনা করি ও নীরবতা পানল করি ।
অনেকে একগাদা শব্দে সুন্দর সুন্দর
কথা বলল যা মমিতার ও জানা ছিল না।
একজন বলল আজকে আমাদের অতিথি মাননীয়া শ্রীমতি মমিতা দাসগুপ্ত। আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন। ওনাকে অনুরোধ করবো কিছু বলতে যেমন কিছু ঘটনা আমরা জানি না।
মমিতা চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল আর বলতে লাগল।
সবাইকে আমার নমস্কার জানাই। আপনারা সকলে যা যা বললেন। কিছু কিছু মোটেই জানা ছিল না। মিঃ দাসগুপ্ত ছিলেন আমার প্রেরণা।
উনি এমন ব্যাস্ত থাকতেন অফিসের কাজ নিয়ে। সেখানে আমার বলার কোনো অবকাশ ছিল না। আমি একাই এক হাতে সংসার চালিয়েছি। দুটো ছেলেমেয়েকে বড় করেছি।
আর একটা কথা না বলে পারছি না।
বলেই ঝরঝর করে কান্না শুরু করে দিল। পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রমহিলা ওকে ধরে নিল। না হলে উনি পড়ে যেতেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিল। আবার বলা শুরু করল। মিঃ দাসগুপ্ত আর আমি একই পাড়ার ও আমাদের পাশাপাশি বাড়ি। ক্লাস টু থেকে একই স্কুলে পড়েছি। উচ্ছ মাধ্যমিক ও একই স্কুল থেকে পাশ করেছি। আবার পড়াশোনাও একই কলেজ থেকে পাশ। পরে ইউনিভার্সিটিতে ও এম কম আর আমি ইংলিশ এ এম এ করেছি। কলেজে থাকতেই বাড়ির মতে আমরা জোড় বেঁধে ছিলাম। ছোটবেলা থেকে কেন জানি না ওর মধ্যে একটা অজানা আকর্ষণ ছিল। কি ছিল তা আমি আজও জানতে পারলাম না। অনেক ভেবেও তার আমি আজও উত্তর পাই নাই। ওর আর একটা ওর ভাল গুণ ছিল। অফিসের কোন কাজ নিয়ে কখনো বাড়িতে আনতো না ও আলোচনা করত না।
আমি আর কিছু বলতে পারছি না। আপনাদের এত ভাল ব্যাবহার পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি। সবাইকে আমার নমস্কার জানাই। বলেই আবার কাঁদতে শুরু করল।
মমিতাকে সেই ভদ্রমহিলা ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।
এবার মাইক হাতে নিলেন সেই সুট বুট পরা ডাইরেক্টর।
মিসেস দাসগুপ্ত যা বললেন স্যরের ব্যাপারে আর কিছু আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও বলি স্যর যখন আমাদের এক ছোট্ট অফিসে জয়েন করেন তখন মোটে দশ জন লোক ছিল। এখন সেখানে দুই শত জন। আর আমাদের বিভিন্ন জায়গায় আরো দু’ হাজার লোক আছে। এর উন্নতির পিছনে ছিলেন মিঃ দাসগুপ্তর একভাগ অবদান।
আর একটা কথা আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি মিঃ দাসগুপ্তর সম্মার্থে আজ আমরা এক ভরির একটা স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে ওনাকে সম্মানিত করছি। বলেই সেই ভদ্রমহিলা ওনার গলায় উত্তরীয় ও স্বর্ণ মুদ্রা পরিয়ে দিলেন। হাত তালিতে পুরো ঘর যেন ফেটে পড়ল।
আবার সেই ডাইরেক্টর হাতে মাইক নিয়ে বললেন। বন্ধুগণ আপনাদের আর একটা কথা বলার আছে। সেটা হল উনি যে কোয়াটারে বর্তমানে আছেন আজ থেকে ওটা ওনাদের হয়ে গেল। আমাদের কম্পানি থেকে মিসেসকে দাসগুপ্তকে চিরকালের জন্য দিয়ে দেওয়া হল। সেই সময় ওই কোয়াটারের সারা কাগজ পত্র ওনাকে আমরা দিয়ে দিলাম।
ভারাক্রান্ত মনে যখন মমিতা ঘরে ফিরল।
দুঃখের মরুভূমির মধ্যে একটা শান্তনা মরীচিকার মত আনন্দ ও সকলের স্মৃতি বিজরিত এই কোয়াটর। ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্চিল।এখন তা ওদের হয়ে গেল নিজেদের চিরকালের মতো।।
মমিতা অনেক ক্ষণ সঞ্চালকের ফটোর দিকে তাকিয়ে কথা বলল। তুমি যেখানে আছ সুস্থ থেক। আবার তার দুই ফোটা চোখের জল পড়িয়ে পড়ল।
বার বার নীরবে মুখে বিড়বিড় বলল
কেন তুমি চলে গেলে।
—-+—-
……………………………………………………………………………..
গল্প : পাশের বাড়ি
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ০৪/০৮/২০২৫
হঠাৎ করে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ । নিতীশ ভাবল এত রাতে কে আবার কড়া নাড়ে। রাত নটায়। শহরতলীতে এই সময় রাত অনেকটা। তখনও লাইট রাস্তায় আসে নাই। চাঁদনি রাত ছাড়া বাকি সব ঘুটঘুটে অন্ধকার। আজ যেন একটু অন্ধকার বেশি। তাই নিতীশ সমাদ্দার যেন একটু অবাক হল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে ।
দরজা খুলে দেখল পাশের বাড়ির অনিমা কাকিমা। ভয়ে ভয়ে কাঁপছে। উতলা শুকনো মুখ। কিছু জিঞ্জাসা করা আগেই বলে উঠল। কোন ভনিতা না করেই –
-নিতীশ শোন তোর কাকু রাগ করে ঘর থেকে এই মাত্র বেরিয়ে গেল ।
নিতীশদের পাশের বাড়ি সুমন্ত মজুমদার কাকারা থাকে। নিতীশ তাকে কাকু বলে ডাকে। কাকু ও কাকিমার সুনাম আছে পাড়াতে। নিতীশের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা দিল। হঠাৎ কি এমন হল ! কাকু রাগ করে বাড়ি ছেড়ে গেল!
দুই তিন দিন ধরে দেখছি কাকু ও কাকিমার মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। তা এমন নয় যে সুমন্ত কাকুকে ঘর ছেড়ে যেতে হবে। যদিও কখনো ঝগড়া তা বেশী সময় ধরে হয় না। আমি অবাক হয়ে গেলাম।
ওনাদের এক মাত্র মেয়ে আছে নাম সুনয়না। সে এগার ক্লাসে পড়ে।
কাকিমা ব্যস্ত হয়ে বলল।
–বাবা একটু যা ! দ্যাখ কাকু কোথায় গেল । আমার তো খুব ভয় হচ্ছে ।
নিশীথের বাবা উৎপল ও মা প্রভাতীর মুখেও উৎকন্ঠা। এত রাতে সুমন্ত গেল কোথায় ।
আমি ওদের দেখে বললাম।
–কাকু এত রাতে আবার যাবে কোথায় ? বাস তো এত রাতে অনেক আগে থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। শিয়ালদহর ট্রেনটা এখনো যায় নাই। আছে।
-বাবা আমি ষ্টেশনে যাচ্ছি ? আর সময় নাই।
-সাবধানে যাস। বাবা বলল।
সাইকেলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলল ষ্টেশনে। ষ্টেশন ওদের বাড়ি থেকে তিন কিলো মিটার দূরে। তাড়াতাড়ি গেলে ট্রেন ধরতে পারবে ।
ষ্টেশনে নিশীথের ঢোকার মুখে ট্রেন ছেড়ে দিল। নিতীশ ভেবেছিল ট্রেনে ছাড়ার আগেই ষ্টেশনে পৌঁছে যাবে । সেটা আর হল না। যারা ট্রেনে উঠল তার মধ্যে কাকু ছিল না কি না। সেটাই তার দেখার ইচ্ছা ছিল। সময় নাই বুঝে লাফিয়ে শেষ বগিতে উঠ পড়ল।
মাঝে মাঝে কোন ষ্টেশন এলে দরজার কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টায় ছিল । যদি সুমন্ত কাকাকে কোথাও নামতে দেখা যায়।
এই করে এক সময় শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌঁছে গেল ।
তাড়াতাড়ি নেমেই এগিয়ে গেল সামনের দিকে। যদি সুমন্ত কাকাকে দেখা যায়। কোথাও দেখতে পেল না ।
চিন্তা যেন তাকে এখন বেশি করে কুরে কুরে খেতে লাগল । বাড়িতে খবর পাওয়ার জন্য সকলে বসে আছে।
এদিকে ওদিকে অনেকবার প্লাটফর্ম ঘুরে সুমন্ত মজুমদারকে দেখা গেল না। চিন্তার পাহাড় তার মাথায় । এত রাতে তবে গেল কোথায় ।
শেষ পর্যন্ত মাঝ রাতে বাড়ি এল নিতীশ এক সময় ।
মা বলল
— যা হাত পা ধুয়ে শুয়ে পড়। মনে হয় পাশাপাশি কোন বন্ধুর বাড়ি গেছে সুমন্ত ।
–আর একটা কথা শোন, সুনয়নাকে নিয়েই ঝামেলা। একটা ছেলের সাথে মেয়ে মনে হয় কোন ছেলের প্রেমে পড়েছে।
ওরা চায় না মেয়ে এত অল্প
বয়সে বিয়ে করুক । আর তা ছাড়া এদের পালটি ঘরও নয়।
–তুমি এত জানলে কি করে ? নিতীশের প্রশ্ন মার কথায়।
–অনিমাই আমাকে বলেছে। কত দুঃখ করল আমার কাছে । অনিমারা চায় সুনয়না আর একটু বয়স বাড়ুক। মোটামুটি কলেজ থেকে যেন বি এ পাশ করুক।
— সত্যি কথা কি এমন বয়স হল যে এখনই পিড়িতে বসতে হবে । আর
এটুকু কারণের জন্য সুমন্ত কাকা বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে। রাগে গজগজ করে মাকে শুনিয়ে দিল নিতীশ।
–আমি যতটুকু জানি অন্য কারণ হতে পারে না।
নিতীশ একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। এত অল্প বয়সে মেয়েরা কেন বিয়ের পিড়িতে বসতে চায়। মাঝে মাঝে সুনয়না ওর কাছে বিশেষ করে ইংরেজি ও অংকগুলো করতে আসত। মেয়েটি হালকা ফর্ষার মধ্যে তন্বী চেহারা।
— যা বাবা একটু গড়িয়ে নে।
মা বলল।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠলেও মাথা থেকে চিন্তা দূর করতে পারল না।
এদিকে সুমন্ত রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বড় রাস্তায় দেখল আধা অন্ধকারে মধ্যে একটা বড় ট্রাক দাঁড়িয়ে । সবে গাড়ি ষ্টার্ট করতে যাচ্ছে। সুমন্ত দেরী না করেই দৌঁড়ে ট্রাকের দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগল। গাড়ির খালাসী মুখ বাড়িয়ে জিঞ্জাসা করল। –কি ব্যপার।
— এ গাড়ি কোথায় যাবে ?
— হাওড়ায়।
–দাঁড়াও দাঁঠড়াও । আমি যাব। জায়গা হবে ।
সুমন্ত জানে অনেকে বাস না পেলে ট্রাকে কলকাতায় যায় । সে কোন চিন্তা না করেই গাড়িতে ওঠে
পড়ল। ওঠে তো পড়ল ! মনে একবার ভাবল। আগে কলিকাতা তো যাই ।
—ড্রাইভার এক জন পাঞ্জাবী । মোটাসোটা। মুখে একগাল দাড়ি ও মাথায় পাগড়ি। সুমন্তকে দেখে কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। তাই বলল
-বাবুজী কাঁহা যায়েঙ্গে ।
সুমন্ত ধীরে বলল :
— হাবড়া মানে হাওড়ায়।
-বাবুজী হামলোগ ভি হাওড়া হোকে যায়েঙ্গে। আপ মেরে সাথ মে চলিয়ে। হাওড়া ম্যাঁ ছোড় দেঙ্গে।
–ঠিক হ্যায় জী।
সুমন্ত কলকাতা অফিসে কাজ করে। সেই হিসাবে হিন্দি বুঝতে পারে। হিন্দিও একটু বলতে পারে।
-বাবুজী হাওড়া আগিয়া । উতর যাইয়ে।
সুমন্ত যে গাড়ির মধ্যে কখন বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নাই। বাড়ির কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়েও পড়ে। এক মাত্র মেয়ে সুনয়না। পড়াতেও ভাল। কেন এ সময় বিয়ের জন্য ব্যস্ত হলো।
ড্রাইভারের কথা শুনে সোজা হয়ে বসে পড়ল । হাওড়া নেমে দেখে সকাল হয়ে গেছে।
ওকে যেতে হবে শ্রীরামপুরে । দেখল হাওড়া ষ্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট কেটে উঠে পড়ল। ট্রেন থেকে নেমে রিক্সা ধরে স্বাধীন সরকারের বাড়ি পৌঁছে গেল ।
স্বাধীন ও সুমন্ত এক অফিসে কাজ করে। বাড়িটা একদম বাজারের মধ্যে। সুমন্ত এর আগেও অনেক বার এ বাড়িতে এসেছে । সুমন্তর কাছে খবর ছিলো। যেটা শহরতলিতে তাড়াতাড়ি চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। তাছাড়া কানাঘুষায় ও কিছু কিছু জানতে পেরেছে। একটা ছেলে যে কিনা এক বাড়িতে পেইন্টিং গেষ্ট ছিল। পরেরটুকু আর কেউ জানে না। এও শুনেছে পথে ঘাটে মাঝে মাঝে তাদের দেখা যেত। এইটুকু খবরে ভরসা করে আজ তার শ্রীরামপুরে আসা।
সুমন্তকে দেখে স্বাধীন অবাক হয়ে পড়ল।
উদ্ভ্রান্তের লাগছে। চুল সব এলো মেলো। উসকোখোসকো চেহারা।
তবুও স্বাধীন শান্তভাবে বলল
–সুমন্ত তুমি এত সকালে। বাড়ির সকলে ঠিক আছে তো ? এমন অবস্থা কেন তোমার। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয় নাই ।
–না না আমি ঠিক আছি।
স্বাধীন আর কথা না বাড়িয়ে বলল
— চল চল ঘরে। ওখানে বসে পরে আলোচনা করা যাবে ।
বলেই ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল ।
তার স্ত্রীকে জয়াকে চা বানাতে ।
— তুমি একটু বিশ্রাম কর।
কিছুক্ষণ পরে সুমন্ত পরিষ্কার হলে।
স্বাধীন জিজ্ঞাসা করল।
— বল সুমন্ত কি হয়েছে?
সুমন্ত যতটুকু জানে তা বলল।
— মেয়ের কত বয়স হবে।
— এই পনের বছর হবে।
— মানে আঠারো বয়স হতে এখনো তিন বছর বাকি।
–হ্যাঁ বল তোমার কাছে কি কি খবর আছে।
— খবর আর বেশি পেলাম কই!
–তবুও!
— শুনেছি ছেলের পিসি এদিকে থাকে। শুনেছি মেসো রেলওয়েতে চাকরিওৈ করে।
–দাঁড়াও দাঁড়াও।
— ওই কোনের বাড়িতে বিমলেন্দু দাস নামে আমার থেকে অনেক বড় এক ভদ্রলোক থাকেন। তুমি একটু অপেক্ষা কর। আমি এই যাব এই আসব। তুমি গেলে হয়তো তোমার সামনে হয়তো কিছুই বলতে চাইবে না।
— ঠিক আছে। সেই ভালো।
ফিরে এসে স্বাধীন যা বলল। ওটা কেউই ভাবতে পারে নাই।
— উনি বললেন। দেখ স্বাধীন। এ ঘটনা আমার মোটেও জানা নাই। তবে একটা কথা বলি। তা ছেলেটি সত্যিই ভালো। উচ্ছ মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিশন পেয়েছে। সাইন্স গ্রাজুয়েছে ভালো রেজাল্ট করেছে। তার থেকে বড় কথা হলো ও একটা চাকরি ও পেয়ে গেছে। আমি তো দেখেছি ভালো বেতনও পাবে।
তবে একটা কথা তা হলো পালিয়ে গেল কেন! এটা আমিও মেনে নিতে পারলাম না।
ঠিক আছে যদি কোনো খবর পাই জানাবো।
বাড়িতে এসে সুমন্তকে বলল। ওনার আত্মীয় ছেলেটা। আর এ ও বলল ছেলেটা একটা চাকরিও পেয়ে গেছে ভালো বেতনও।
— শোনো স্বাধীন আমি আজ আর অফিসে যাব না। শুক্লাজি কে একটু বলে দিও।
ঠিক আছে। চলো খেয়ে নিই। আর এক সাথেই ট্রেনে চল যাই।
–ঠিক আছে।
হাওড়া নেমে স্বাধীন অফিসের চলে গেল। সুমন্ত বাড়ির দিকে চলল।
বাড়ি গিয়ে আগে গেল থানায়। একটা এফ আই আরও করে দিল।
থানার ও সি বলল।
–কেসটা আপনারা মিটিয়ে নিন। আপনারা যদি বলেন ছেলেটাকে দরকারে আমরা এ্যরেস্ট করব।
কিন্তু তা কি ঠিক হবে ? আমি পুলিশ পাঠাচ্ছি। দেখি কি করা যায়।
দুই দিন ধরে ওদের কোনো খবর পাওয়া গেল না।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেল। ওরা বাইরে কেউ যায় নাই। পাড়ার একটা হোটেলের মাধ্যমে খবর পেল। এক সদ্য বিয়ে করা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে অল্প বয়সের ওই হোটেলে উঠেছে।
পুলিশ তাদের থানায় এনে রেখেছে। সুমন্ত ও অনিমাকে থানায় আসতে বলল।
তারা দেখল মেয়ের মাথায় বাসি রাতের সিঁদুর। পরনে লাল রঙের শাড়ি। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা। কি হয় কি হয় একটা ভাব। মা ও বাবাকে দেখে তাদের কোনো ভাবান্তর নাই। আর দু’ জনে সারাক্ষণ মাথা নীচে করে রইল।
থানার ও সি বললেন।
— শুনুন সুমন্ত বাবু। আমরা যতটুকু ওদের থেকে খবর পেয়েছি।
ওরা দু’জনেই দু’জনের এক গভীরভাবে ভালোবাসার জন্ম নিয়েছে।
কিন্তু বাঁধা হলো আপনাদের মেয়ের বয়স। এখনো আঠারো বছর পূর্ণ হয় নাই। আর এখানে আইন বলছে মোটেও বিয়ে হতে পারে না। আর আমাদেরও এ বিয়েতে আমরা সম্মতি দিতে পারি না।
এবার আপনারা বলুন কি করতে চান।
অনিমা ও সুমন্ত একই বলে উঠল।
__ প্রথম মতো এ বিয়ে মানি না। আমরা মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে চাই। আর আমরা মেয়েকে আরও পড়াবো। তারপর বিয়ের কথা।
ও সি বলল
— এখানে একটা কথা বলাল দরকার তাই বলি। আমাদের সকলের ছেলে বা মেয়েকে ভালো পড়াশোনার পর ভাল পাত্রপাত্রস্থ করা। আবার বলি একটা ভালো ছেলে ও সাথে ছেলের চাকরির দরকার আছে।
শুনেছি ছেলেটা রেলওয়েতে একটা ভালো চাকরির অফার পেরেছে। ছেলে চাকরি পাওয়া বলতে সেখানে অন্য কথার কোন ঠাঁই নাই।
এবারে আপনা বললে আমরা আমাদের কাজ আরম্ভ করতে পারি?
অযথা ছেলে মেয়ে এমন কি আপনারা ও সময় নষ্ট হবে। তাতে ছেলের জেল হলে আর চাকরি পাবে না। আর মেয়েরও পড়াশোনা হবে না।
বলুন কি করবেন। আর একটু ভেবে নিয়ে বলুন।
— আপাতত আমরা আমাদের মেয়েকে ঘরে নিতে চাই।
— ঠিক তাই করুন। আবার এটাও আপনাকে বলে রাখি। যদি মেয়ে ও ছেলেকে কোনো ভাবে মানসিক নির্যাতন আপনাদের দ্বারা স্বীকার হয়। আর সেটাএ হয়রানি ছাড়ার আর কিছুই হবে না। মেয়ে যদি রাজি হয় নিয়ে যান। ছেলের সাথে আমরা আলাদা কথা বলে নেব।
— চলো সু আমাদের সাথে।
— না না আমি ওকে ছেড়ে যাব না। ওর কোনো দোষ নাই। যা হয়েছে আমার জন্য হয়েছে। আমাদের দু’জনকে যদি নিতে পার তবে যাব। অন্যথা না। আমি কোন কথা শুনবো না।
অগত্যা উঠতি দুই ছেলে মেয়ের জেদের কাছ মা বাবা মাথা নত করল।
—-+—-
…………………………………………………………….
ছোট গল্প : স্বপ্ননীল
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ১৪/০৮/২০২৫
এক
রাত তখন প্রায় দশটা। কিংশুক একাই গাড়ি চালাচ্ছিল। সঙ্গে রোজ বাবা না হয় দাদা কেউ থাকত। শুনশান রাস্তা। রাস্তার পাশে একটা ছোট বন আছে। তা এক কিলোমিটার লম্বা হবে। ওদের ফ্যাক্টরি আছে শহর থেকে পাঁচ কিলো মিটার দূরে। রোজই এই রাস্তা দিয়ে ওদের যাওয়া আসা ছিল। এক পসলা বৃষ্টি একটু আগে হয়েছিল। তাই রাস্তা আজ অনেকটাই নির্জন। বিশেষ করে বনের ধারে।
গাড়ি চালাতে চালাতে দূর থেকে দেখল রাস্তার উপরে সাদা কাপড়ের কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। কিছুদুর যাওয়ার পরে পরিষ্কার হল একটা মানুষ লম্বালম্বি ভাবে শুয়ে আছে। তা ও এ রাতে! তারপর বনটা যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক তার ধারে।
একটু নিকটে গিয়ে দেখল একটা মেয়ে। অবাক হয়ে গেল শুয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে।
একটা টর্চ নিয়ে গাড়ি থেকে নিয়ে এল। টর্চ জ্বালিয়ে দেখল একটা মেয়ে আনুমানিক উনিশ কুড়ি বছরের হবে।
এক পায়ে একটা জুতো। আর একটা পায়ে কোনো জুতো নাই। টর্চ জ্বালিয়ে কাছাকাছি কিছু দেখতে পেল না। আর তখন ও একটা পায় দেখা গেল একটু রক্তাক্ত। এখন কি করা উচিত তা ভেবে পাচ্ছে না কিংশুক। এমন অবস্থায় ও কখনো আগে পড়ে নাই। পাশাপাশি কোনো লোককেও দেখতে পেল না সে।
একটা কথা তার মনে খটকা লাগছে। এত রাতে মেয়েটা এখানে এল কি করে! মনে হলো দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আসছিল! কেন আসছিল? আনেকগুলো জিজ্ঞাসা তার মনের গেঁথে গেল।
বেশি চিন্তা না করে ও নিজে মেয়েটিকে পাঁজা করে কোলে তুলে গাড়ির পিছনের সিটে শুয়ে দিল। সেই সাথে গাড়ি চালিয়ে তাড়াতাড়ি একটা হাসপাতালে নিয়ে গেল। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে দিল। যেহেতু হাসপাতালে ওর জানা শোনা আছে। মেয়েটিকে অনায়াসে ভর্তি করে নিল।
সাথে সাথে থানাতে ফোনও করে দিল কিংশুক। এও বলল ওসিকে। পরে থানায় গিয়ে এফ আই আর করবে।
এর মধ্যে বাড়ি থেকে কিংশুকের বাবা মা ফোনে ওর সাথে কথা বলল। কি কি ঘটেছে কিংশুক সবাইকে বলে দিল। দাদা বলল ও হাসপাতালে সে আসছে।
ওসি কিংশুককে জিজ্ঞাসা করল।
— কোথায় মেয়েটিকে পেলেন?
— বনের পাশে। ওই সতিনাথ পুরের কাছাকাছি রাস্তায়।
— আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম। তারা বলল আপাতত মেয়েটির জ্ঞান নাই। কিছু সময় লাগবে। পরে সব জানতে পারব।
একদিন পর যখন মেয়েটির জ্ঞান ফিরল। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল থেকে থানার ও সিকে ফোন করে জানাল।
ও সি এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করল।
— তোমার নাম কি?
— সঞ্চারী।
— সঞ্চারী কি?
— সঞ্চারী অধিকারী।
— বাড়ি?
–দেবীনগর
মেয়েটি একটু থেমে বলল
— বাবা মা!
— আমি যখন দশ বছরের তখন আমার মা মারা গেছে।
— তারপর আর বাবা?
— মা মরার এক বছর পরে বাবাও চলে গেল।
কাঁদতে শুরু করল। শাড়ির আঁচল দিয়ে বার বার চোখ মুছতে লাগল।
— তারপর তুমি কোথায় থাকলে।
— মামা বাড়ি।
— সেখানে কি ভালো ব্যবহার পেতে না।
— না! পেতাম না।
— না কেন!
আবার কাঁদতে শুরু করল।
— না না। কেউ ভালো বাসতো না।
এর মধ্যে এক গ্লাস দুধ ও সাথে কয়টা বিস্কুট ও দিল ওকে খেতে।
ও বিস্কুট ও দুধ খাওয়া দেখে মনে হলো ভালো করে খাবারও পেত না।
— তুমি এখানে কি করে এলে?
— দিবাকর এখানে নিয়ে এসেছিলো।
— দিবাকর কে? তার বাড়ি বা কোথায়?
— আমাদের পাশের গ্রামে ছিল।
এতক্ষন কিংশুক ও তার দাদা সর্বাংশু দত্তরায় সব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।
চেহারা রোগা হলেও দেখতে একদম সুন্দরী না হলেও সে সুন্দরীর কম নয়। চোখদুটো যেন অনেক কথা বলতে চায়। ঠোঁট পাতলা।
মেয়েটি তার কথা সব জানাল। বাড়ি তার ধীরা পাড়া।
পরের বছর বাবাও চলে গেল।
দুই
তবে দিবাকরে সাথে কি করে পরিচয় হলো।
–স্কুলে যেতে যেতে।
–যদি আমাদের কাছে আরও একটু খুলে বলতে?
সামনে দাঁড়িয়ে যে কথা বলছে। তাকে সঞ্চারী দেখল এক সুদর্শন এক যুবক। ভগবান যেন তাকে সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছে।
ওকে দেখে সঞ্চারী মাথা নীচু করে বসে রইল।
— তারপর কি হলো। আবার বলল কিংশুক।
মাথা নীচু বলল।
–তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। ভালো রেজাল্ট করে আমি এগারো শ্রেণীতে উঠলাম।
রোজ রোজ স্কুলে যেতে দিবাকরের পথে দেখা হতো। তখন্য উঠতি বয়স। রূপকার বিধাতা আমায় গড়েছে। কি করে কখন যে প্রেম হয়ে গেল। জানতেই পারলাম না। মনের ভিতরে কি যে হলো। ওই বিধাতার রূপান্তরে।
তখন মামা বাড়ির অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে হাতে সাহারার মরীচিকার মতো দিবাকরকে মনে হলো। এই লোভের হাতছানি থেকে আর বাঁচতে পারলাম কই। আর ওই লোভের বসে ঘর ছেড়ে পালালাম। সাথে ছিল একটা ছোট বাক্স।
— সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখানে ওই রাস্তায় কি করে এলে।
— ও বলল ওর মামার বাড়ি এখানে আছে।
–তারপর?
— আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে একদিন ডেকে বলল। ওনার কাছে কিছু গহনা ছিল। ওগুলো ছিল আমার মার। তা দিয়ে দিল। আর বলল সাবধানে রাখতে। সেটা নিয়ে আমি সাথে এসেছিলাম। এক সময় সে আমাকে বলল বাক্সটা তাকে দিতে। কারণ নাকি আমার কষ্ট হচ্ছে। সরল মনে তারে দিয়েও দিলাম। কিছুটা পথ চলতে চলতে হঠাৎই ঘুরে পিছন দিকে দৌঁড়াতে শুরু করল। আমি কিছু বুঝার আগেই দৌঁড়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেল। আমি ধর ধর করে চিৎকার করতে ওকে ধাওয়া করলাম। তখন দেখলাম কয়টা লোক আমার দিকে দৌঁড়ে আসছে। ওদের দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। ওদের থেকে বাঁচতে আমিও অন্য দিকে দৌঁড় শুরু করলাম। এক সময় আমার এক পায়ের জুতো কখন যে খুলে গেল বুজতেই পারলাম না। তারপর এই বড় রাস্তায় এসে হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। আর আমার আর কিছু মনে নাই। কে আমাকে বাঁচালো ও এখানে কি করে জানি না। যখন জ্ঞান ফিরল। দেখি হাসপাতালের এই বেডে শুয়ে আছি। বলে কিংশুকের দিকে ভেজা চোখে দেখল।
তখন ও সি বলল
— এই ভদ্রলোক কিংশুক বাবু তোমকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
এখন সঞ্চারীর একটাই চিন্তা এখন ও কি করবে। অথবা এর পরে কোথায় যাবে।
ওর মুখ দেখে কিংশুকের দাদা বলল।
— বোন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি খুব চিন্তায় আছে। কালকে তুমি কোথায় থাকবে তা জান না। শোন সঞ্চারী আমাদের একটা গার্লস হোষ্টেল আছে। সেখানে তুমি থাকবে। তোমার কোনো টাকা পয়সা লাগবে না। আমরা নিজেরা দেখাশুনা করি।
একটা স্কুল আছে সেখানে তোমাকে
আমরা পড়াব।
সঞ্চারী বারবার তার লাল চোখে একবার কিংশুক ও তার দাদার তাকাচ্ছিলো।
সেই সাথে সঞ্চারীর মনে আখিলবন্ধু ঘোসের সেই গানের কয়টা লাইন মনে পড়ল।
“ওই যে আকাশের গায়,
দূরের বলাকা ভেসে যায়।
ওরা বাসা বাঁধে না ——”
—-+—-
……………………………………………………………………
গল্প : পরকীয়া
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ১৭/০৮/২০২৫
এক
খুশি তার নামটা দিয়েছিল ঠাকুরদা। হয়তো ভেবেছিল খুশি নাম দিলে সংসারের অবস্থা একটু ভাল হবে। সেটা আর হলো কই। বিয়ে দিল তারে যার সাথে সেও গরীব। গ্রামটার সকলে গরীব। ও পুরো পাড়াটাও। দিন আনে দিন খায়। কোন রকমে এক বেলা পেট ভরে খাবার জোটে।
বিয়ের পরে খুশি সুখ পাক আর না পাক। প্রথম ছেলের জন্মের পরে খুশির আর আনন্দের সীমা নাই। আর যা হোক একটা রোজগারের লোক ভবিষ্যতে সংসারের কাজে লাগবে। তার বর শিবু তার কথা শোনে। জানালো তারে আমাদের আর ছেলের আর মেয়ের কোনো দরকার নাই। পরে একটা মেয়ে হল তাতেও তারা সুখী। এই ভাবে তাদের আর একটা সন্তান হল। তারা চিন্তায় পড়ে গেল। শিবু বলল সে বাইরে গিয়ে কাজ করবে। অনেক টাকা পাবে। ওদের স্কুলে পড়াবে। সলা-পরামর্শ চলে এ ভাবে।
একদিন সকালে একটা পুটুলিতে কিছু চিড়া,কয়টা আখের গুড়ের ঢেলা। আর যাবার সময় কয়টা আটার রুটিও নিয়ে নিল। পথে যেতে যেতে খেয়ে নেবে। যাবে শহরে। বাসে চড়ে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল।
দেখল বাস স্ট্যান্ডে প্রচুর লোকের ভীড়। সব দেখে মনে হয় দূরের যাত্রী।
একটা বেঞ্চে যায়গা পেয়ে গেল। ভাবল ভালোই হলো। রাত কাটানোর জন্য এটাই উপযুক্ত যায়গা। পাশে একটা খাবেরের দোকান আছে। সবাই ওখান থেকে রুটি সবজি এনে খাচ্ছে। ও ওদিকে তাকাতে চায় না। বড়লোকিপানা করলে চলবে না। অপেক্ষা না করে বাড়ি থেকে আনা রুটির সাথে গুড় দিয়ে পরম তৃপ্তি করে খেয়ে নিল। কারণ মাথায় মধ্যে তার অনেক চিন্তা। আপাতত একটা কাজ চাই। কিন্তু কি ভাবে তা হবে। তা জানে না। কখন যে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল হতেই লোকের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
দেখল পাশে একটা লোক গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তার পায়ে আবার ব্যান্ডেজ বাঁধা। জিজ্ঞাসা করল
–কি হয়েছে তোমার পায় ?
— একটা গাছে উঠেছিলাম। সে দিন আবার হালকা হালকা একটু বৃষ্টি হয়েছিল। কিছু কাঠেরও দরকারও ছিল। বাধ্য হয়েই গাছে ওঠা। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যাই। পায়ে ভাল চোট লাগে। বলল লোকটা।
–দেখছি তোমার পায়ে তো এখনও চোট আছে।
–হাঁ । উপায় তো নাই !
— কেন কি হয়েছে। পরে এলেও তো চলত। বলল শিবু
— না না । আমি একটা বাড়িতে কাজ করি।
— তা
— মালিক বলল চলে আসতে তাই এলাম।
— তুমি কি এমন কাজ কর যে অসুস্থ হয়েও তোমাকে চলে আসতে হল।
— আমি একটা বাড়িতে বাগানে কাজ করি। বিরাট বাগান বাড়ি। আম জাম কাঁঠাল নারকেল সুপারি গাছ ছাড়া অনেক রকমের কাছ গাছ আছে। পাশে আছে তিন বিঘা জমি। সেখানে আলুর চাষ, ফুল কপি, বাঁধা কপি তাছাড়া তার সাথে আছে বিভিন্ন সবজির চাষ।
— সে তো আমি না হয় সব বললাম। তুমি কে গা ? কোন গ্রামে তুমি থাক।
— আমি থাকি হরিহর পুর গ্রামে।
— তুমি এ শহরে কেন এলে ?
— কাজের জন্য এসেছি।
— কি কাজ তুমি কর ?
— গ্রামে তো সকল কাজ করি ।
— তা এখানে কেন ?
— গ্রামে এখন কাজের ভাটা চলছে।
— তুমি মাটি কাটার কাজ করতে পারবে ?
— কেন না। গ্রামে মাটির কাটা থেকে জমি চাষ করা, ফসল কাটা সবই করতে হয়।
— তুমি এক কাজ কর। আমার সাথে চল। মালিককে বলব। মনে হয় তোমাকে নিয়ে নেবে। ওখানে কাজের লোকের দরকার আছে।
আর একটা কথা। মালিক জিজ্ঞাসা করলে বলবে পাশের গ্রামে থাকি। আমি তোমার জানাশোনা। আমার নাম বিপিন মন্ডল। আমাকে বিপিনদা বলবে কেমন।
— তা কখন যেতে হবে।
— ও মা। এখন কোথায় বাস। বাস তো পাবে সেই সকালে। সাতটার পরে।
— তুমি এ পা নিয়ে কিরে যাবে।
— সে চিন্তা কর না। এত দূর থেকে যখন আসতে পেরেছি । বাকি পথটুকুও চলে যেত পারব। তা ছাড়া তুমি তো আছ।
শিবু একটু গর্ব মনে করল। আর ভাবল বিপিন অনেক দয়ালু লোক। না হলে অচেনা লোককে কাজের কথা কেউ বলে। যেখানে চারিদিকে চোর ছ্যাঁচড়ায় ভরা। সব চেয়ে বড় কথা হল অচেনা লোককে হঠাৎই বিশ্বাস করা।
— আর হ্যাঁ তোমার নামটা তো জানা হল না।
— শিবু সরকার।
বাস স্ট্যান্ডের ঘড়ি দেখে বিপিন বলল
— বাস আসার সময় হয়ে গেল। চল একটু এগিয়ে যাই। না হলে ভীড় বেশি হলে আবার বসার জায়গা পাব না।
— চল যাই। শিবুর মনের মধ্যে এখন কাজের চিন্তা। বিদেশ ভুঁইয়ে কোথায় কাজ পাবে বা থাকবে কোথায়! অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে নিজের চিন্তা যেন পাহাড প্রমান জমে আছে। কাজ পেলে মনের চিন্তা দূর হবে। তার থেকে বড় চিন্তা কাজ বা টাকা কোথা থেকে আসবে। বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যপারও মাথার মধ্যে ও ঘুরপাক খাচ্ছে। চিন্তার মধ্যে একটা যেন আলোর রশ্মি দেখতে পেল। এখন বিপিনদাই সব ভরসার সমাধান করতে পারে।
আশার কোন শেষ নাই। অপেক্ষায় বসে থাকা । বিপিনদার মালিক কি বলেন।
— এই যে শিবু আমাদের নামতে হবে। চল চল এর পরের স্টপেজে নামব। এসেই গেছি।
দুই জনে নেমেই বিপিন বলল
— এখান থেকে একটা রিকশায় নিয়ে যেতে হবে তা প্রায় দুই কিলো মিটারের মতো।
দুই
রিক্সায় চলতে চলতে শিবু দেখল এটা এক ছোট শহর। চারিদিকে নতুন বসতি শুরু। রাস্তার দুই ধারে নতুন বাড়ি ঘর কোনটা আবার দোতলা। তবে সংখ্যায় একতলা কম। শহরটা মনে হচ্ছে নতুন পত্তন হচ্ছে। প্রত্যেকটা বাড়িতই ছোট বড় বাগান আছে। অনেকেই আবার ছাদে ফুলের বাগান সাথে পাতাবাহারও গাছ আছে।
রিক্সা যেখানে থামল শিবু দেখল বিশাল একট গেট। তার পিছনে বাড়িটা দোতলার একটা বাড়ি। বাড়ির চারিদিকে পাঁচিল দেওয়া। বাড়ির রঙ গোলাপী। আর দেওয়ালের রঙ সবুজের। তবে বিভিন্ন কারুকার্য করা। শিবুর ভাল লাগল।
তার মনে দ্বিধা এখনও পুরোপুরিই যায় নাই । যাবে বা কি করে ! যতক্ষণ না বাড়ির মালিকের সম্মতি পাওয়া যায়। ওদের দেখে একটা অল্প বয়সের ছেলে এসে গেট খুলে দিল। নাম তার বিজয়। বলল
— এ মা বিপিনদা। এস এস। কাকু তোমার পায়ের আঘাত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তুমি এখন কেমন আছ।
–ওই আছি এক প্রকার।
–হঠাৎ কি এমন হলো তোমার চোট লেগে গেল।
— আর বলিস না। একটা গাছে উঠেছিলাম কিছু জ্বালানির কাঠ আনতে। কালকে আবার ওখানে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে বুঝতে পারি নাই পা পিছলে পড়ে যাই। এমনভাবে পড়লাম। ব্যথায় কাতরাতে শুরু করি। যেন উঠতেই পারছিলাম না। আমার অবস্থা দেখে পাড়ার ছেলেরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। একটা মলম ও কয়টা ট্যাবলেট দিল।
— এখনও দেখছি খুড়িয়ে চলছ। ব্যথা কি এখনও আছে।
— না রে অনেক কমে গেছে। যে টুকু ব্যথা তা কমে যাবে।
হ্যাঁরে কাকু কি কিছু বলছিলেন।
— হ্যাঁ তো। তোমার কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলেন।
শিবু বুঝতে পারে কাকু মানে এ বাড়ির মালিক।
বিপিন জিজ্ঞেস করল।
–কাকু কি এখন বাড়ি আছেন ?
–সকালের খাবার খেয়ে এখন রোদে বসে পেপার পড়ছেন।
বাড়ির মালিক বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাড়ি দক্ষিণদিকে মুখ করা। দুই একটা গাছ থাকাতে পূর্বের রোদ কম আসে। হয়তো রোদের জন্য বসে বসে পেপার পড়ছেন পূব দিকের ছোট বারান্দায় বসে।
শিবুকে দেখে বলল বিজয় এ কে!
–আমাদের পাশের গাঁয়ে থাকে।
বিপিন বলল
— কাকুর সাথে এখন আর কথা বলব না। সময় মত পরে কথা বলে নেব। চল বরং আগে কিছু খেয়ে নি।
বাড়ির পিছনে দু’টা ঘরের দিকে দু’জনে গেল।
শিবু বলল
–তুমি কি এখানে থাকতে।
–হ্যাঁ তো।
এটা হচ্ছে বড় লোকদের কথায় চাকরদের ঘর কেয়ার টেকারদের ঘর । বিপিন দেখল পাশাপাশি দু’ খানা ঘর। পাশে একটা টিউবল ও তার পাশে একট পায়খানা ঘরও আছে।
বিপিন বলল তুমি ঘরে বস। আমি হাত পা ধুয়ে আসি।
বলে চলে গেল কলতলায়।
বিপিন ফিরে এসেই বলল
— একটু বস। চা বানাচ্ছি। সকালে চা না খেলে ঠিক মতো মেজাজ আসে না।
দুই কাপ হাতে করে বিপিন চা নিয়ে এল।
__ তুমি একটু বাগানে একদিক ও দিক ও ঘোরাঘুরি কর। আমি আসছি। বলল বিপিন।
তিন
এর মধ্যে শিবুর ছেড়ে যাওয়া বাড়িতে বুনোজল ঢুকে গেল। শিবুর দূর সম্পর্কের পিসতুতো ভাই আদিত্য একদিন ওদের বাড়িতে এল। খুশিকে জিজ্ঞাসা করল
— বৌদি শিবুদা কোথায়?
— ঠাকুরপো ওতো বাড়ি নাই।
— কোথায় গেছে?
— ওই শহরে গেছে।
__ কেন হঠাৎ?
— এখানে তো এখন কোনো কাজ নাই। আমাদের তো কিছু খেতে হবে।
তাই যাওয়া।
— এখন কি ঘরে চাল ডাল বাড়ন্ত?
— বর্তমানে ঘরে কোনো খাবার নাই। যা আছে আজ এক বেলা চলে যাবে।
— ঠিক আছে বৌদি, আমাকে দুই টা ব্যাগ দাও। দেখি কিছু পাই কি না।
আদিত্য বাজারে চলে গেল। ফিরে এসে খুশিকে ডাকল।
— এই নাও বৌদি।
— এত কেন আনলে!
— দেখ বোদি আমার বাজার করার কোনো অভ্যাস নাই। তাই যাৎপেলাম তাই নিয়ে আনলাম।
খুশি দেখল ঘরে নুন লঙ্কা মোটেই নাই।
চলে গেল খুশি পাশের বাড়িতে। সেখান থেকে একটু নুন ও কয়টা কাচা লঙ্কা নিয়ে এল।
আদিত্য তা দেখল।
বলল
— বৌদি আমি এখন চলি?
— ঠাকুরপো এখন কোথায় যাবে?
— আমি চাল ডাল বসিয়ে দিচ্ছি। কয়টা খেয়ে যাবে।
ও বাচ্চাদের বলল কাকুকে একটু বসার ব্যবস্থা কর।
আদিত্য ছোট্ট একটু বারান্দায় একটা খেজুরের চাটাইয়ে বসে পড়ল।
খাবার হলে আদিত্য ওদের সাথে খেয়ে চলে গেল।
এক সপ্তাহ পরে আবার এল। খুশিকে জিজ্ঞাসা করল।
— তোমরা সকলে ভালো আছো তো!
–কি করে আর ভালো থাকি বলতো। তোমার দাদার খবর এখনো পেলাম না। বাচ্ছারা সব সময় বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে। বড় কষ্ট হয়। উত্তর দিতে পারি না।
— সে তো ঠিক কথা। খাবারের খবর কি! বাচ্ছারা আছে ওদের দিকে তো দেখতে হবে।
— সে তো মানলাম এভাবে কতদিন চলবে।
— সময় তো আছে। ঘাবড়াবে না। আমি তো আছি।
এই ভাবে ঘী আর আগুন পাশাপাশি চলতে থাকল। আগুনের জ্বালা শুরু হলো খুশির মনে। আগুনের সে দহনে শেষ পরিনিত হলো। মানব সমাজে তার কোন উত্তর নাই।
তাই একদিন পাখি ফুরুৎ করে উড়ে গেল। পড়ে রইলো নিরীহ অবোধ কয়টা বাচ্ছারা। বাবা মা ছাড়া। পড়ে থাকলো ঘরে উচ্ছিষ্ট কিছু তাদের খাবার।
ওদের কান্না দেখে পাশের বাড়ির কাকিমা চলে এল। জিজ্ঞাসা করল
— কেন রে তোরা কাঁদছিস।
বড় ছেলেটা বলল
— কাকিমা অনেক্ষণ মাকে দেখছি না। –কিছু বলে যাই নাই। আর তোদের বাড়িতে যে লোকটা সে কোথায় রে।
–জানি না।
— সে কি কালকে তোদের বাড়িতে এসেছিলো?
— উনি কালকে আসে নাই।
কাকিমার মুখ দেখলে বুঝা যায়। কোনো কিছু উনি কিছু সন্দেহ করছে।
পাড়ার ছেলেরা খবর পেয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেল খুশিকে খুঁজতে।
এক ঘন্টা পরে সকলে যখন ফিরে এল। জানালো কোথাও খুশিকে দেখতে পেল না। খবরটা থানাও পৌঁছে গেল। থানার দারোগা অভয় দিল তারা দেখবে ঘটনা কি ভাবে ঘটেছে। থানার দারোগা সব খবর নিয়ে নিল। এও খবর নিল যে ছেলেটি পাশের গ্রামে থাকে। আদিত্য তার নাম।
পাড়ার লোকদের একটা খটকা লাগল। এই গ্রামটা গরিব। কে বাচ্ছাদের দায়িত্ব নেবে ওই বাচ্ছা তিন জনের। পাড়ায় শিবুর ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না। ও কোথায় গেছে। কি করছে। পাড়ার এক পিসি পুতুল আছে। তার তিন কুলে কেউ নাই। তাকে ধরা হলো। বাচ্ছা তিনটিকে দেখাশোনার জন্য। উনি রাজি হলো।
পাড়ার সবাই মিলে এক মাসের চাল ডাল কিনে দিল। পিসি ওদের রান্নাটা হাতে নিয়ে নিল।
এদিকে সময় গড়িয়ে এক মাস পেরিয়ে গেল।
শিবু বাড়ির মালিককে বলে কয়ে নিজের গ্রামের চলে এল দুই দিনের জন্য। এসে বাড়ির সব দেখে শুনে অগাধ জলে পড়ে গেল। ওদের জড়িয়ে ধরে শুধু কান্না আর চোখের জল ফেলা। ওর আসার খবর পেয়ে বয়স্ক লোকেরা এসে বললেন।
—শিবু এখন কি করবে। কিছু চিন্তা ভাবনা করলে?
শিবু হাত জোড় করে সকলকে বলল।
–আমার বাচ্ছা তিনটার জন্য যা করলেন আপনারা তার আমার কাছে কোনো উত্তর নাই। আমি ক্ষমা প্রার্থী।
— তা তুমি এখন কি করতে চাও।
— আমি সত্যিই আমার বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি। আমি আপনাদের থেকে মোটে তিনটা দিন সময় চাচ্ছি। আমি যেখানে কাজ করি ওরা আমার থাকার জন্য আলাদা একটা ঘর দিয়েছে। ওই বাড়ির মালিক বলে ওদের তিন জনকে যদি নিয়ে যেতে পারি তার ব্যবস্থা করতে পারি সব ভালো হবে। আর তা যদি না হয় আমি কাজ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হবো। আমি কাল একা চলে যাচ্ছি। আর সেই সাথে পুতুল পিসিকে বলব আর দুই একদিন একটু কষ্টে থাকতে।
পরের দিন শিবু শহরে চলে গেল। পৌঁছেই বিপিনকে সব কিছু বলল। মালিক ও সব শুনে বলল
— শিবু তুমি ওদের এখানে নিয় এস। আমি দেখছি কি করা যায়।
আমি ওদের পড়াশুনার দায়িত্ব নেব। যাও ওদের নিয়ে আস।
সেই মতো তিন ছেলে মেয়েকে পরের দিন শিবু নিয়ে এল।
অনেক বছর পরে
শিবুর এখন বয়স হয়ে গেছে। দেশের বাড়ি ঘর বিক্রি করে শহরে পাকাপাকি থাকতে শুরু করেছে। তিন ছেলে মেয়ে এখন বড় হয়ে গেছে।
মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। ছেলে দুই জনে ভাল চাকুরী করে।
তবুও শিবূ্ মাঝে মাঝে গ্রামে যায়। যদি খুশি ফিরে আসে কখনো। ছেড়ে যাওয়া বাড়ি দেখলে আজও তার বুক খাঁ খাঁ করে।
—- সমাপ্ত—-
……………………………………………………………………………….
কবিতা : আমার একলা চলা
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ৩০/০৮/২০২৫
আমার একলা দূরের আকাশ টা,
নীচে মেঘ রাশির উড়ে যাওয়া টা।
মাঝে মাঝে গুমরে ওঠে তাদের,
হৃদয়ে প্রতিফলিত এক বজ্রপাতের।
নীরবে নিভৃতে একলা পথে চলা,
চেয়ে দেখা নীরব আকাশের খেলা।
জোনাকির আলো নেভার খেলায়।
পথে পথে তারা আলো জ্বালায় ।
যেখানে হাজার তারা স্বপ্ন দেশে,
বলাকার দেশে যাব ভেসে ভেসে।
একা তারা পাহারা দেয় যেথা,
স্বপ্ন এসে দেখা দেয় বারে সেথা।
নিশীথ রাতে আমার একলা চলা,
চারিদিকে যেন আঁধারের ফলা।
দেখি মুহ্যমান আকাশের তারা,
আপেক্ষায় ভোর রাতের তারা।
ভুলে যায় নাই তারা গোধূলির মেলা,
পাখিদের যখন ঘরে ফেরার পালা।
প্রভাতে সূর্য্য তোরণ আলোর রথে,
আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে চলার পথে।
—-+—-
……………………………………………………………………………….
সৌজন্যে : বুড়োরা
কবিতা : ইলিশ উৎসব, ২০২৫
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ০৪/০৯/২০২৫
আমরা পাড়ার বুড়োরা কয়জনে,
ব্যাস্ত সবাই ভাপা ইলিশ ভোজনে।
বেঁধেছি কষে আমরা সবাই কোমর,
ঝর ঝর ঝরেছে সে ইলশে গুড়ির।
আকাশ আজ হয়েছে ছ্যাঁদা,
রাস্তা ঘাট মেখেছে সব কাদা।
আকাশও ভেঙে পড়েছে আজ,
দেখি ইলশে গুড়ির অপূর্ব সাজ।
পাল তুলেছি শিখাদির ছাদে,
মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি এসে বারে কাঁদে।
ছাড়ি নাই আমাদের সে জিদ,
ভেবে দেখেছি আমরা সব দিক।
ভোজনে জিবের শর্ষের স্বাদ,
খেতে খেতে চামচ হাতা বাদ।
রস ছেড়ে মুড়মুড়ে মাছ ভাজা,
কাঁচা লঙ্কাতে ভারি পাই মজা।
চোখের জল নাকের জল এক,
খায় গড়াগুড়ি এদিক ওদিক।
ভোজনে তৃপ্ত রসের ধারা,
স্বাদে গন্ধে ভেসে যায় তারা।
অপেক্ষায় আবার বছর শেষে,
হাজির হব সকলে বুড়ো বেশে।
আসে যেন এমন এ ইলশে গুড়ি,
জড়ো হব একে একে গুড়ি গুড়ি।
—-+—-
…………………………………………………………………………….
কবিতা : ছায়া ঘেরা বাসরে
কলমে : শ্যামল বিশ্বাস
তারিখ : ১২/০৯/২০২৫
দেখি তারে প্রথম ছায়া ঘেরা বাসরে,
ডাগর ডাগর দেখে বারে বারে আমারে,
এক আলো আঁধার রাতের মাঝে
সন্ধ্যার গোধূলির সাত রঙের সাঁঝে।
আমি সাঁতার কাটি তার অতল জলে,
মুক্তার খোঁজে যাই ঝিনুকের খোলে।
জানতে ডুব দিই গভীর জলের ভিতরে,
গাঢ় কালো সে হরিণী চোখেরে।
আমি বারে বারে ঘুরি প্রান্তরে প্রান্তরে,
কি লেখা আছে তার চোখের ভিতরে।
বছর গড়িয়ে চলে গেল একে একে,
কাঁটা ছেড়া করি চোখে একে বেঁকে।
মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই অচেনা গভীরে,
হাবুডুবু খাই অহরহ আমার মনের ভিতরে।
আজও যখন ভাবি তারে নিভৃতে,
অনুশোচনা হয় দেখতে সে চোখ দুটিতে।
শোভা শোভিত আকাশে দেখি না প্রতিকার,
কালো কালো মেঘ যে আসে বার বার।
ভালোবেসে আজও থাকি তার পাশে,
উদিত সূর্য চলে গেলেও বেলা শেষে।
—-+—-
…………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………….
For publication of your creative composition like poem, story, painting, achievement, any article, pl. post here – 9339228087, 6289583507.
For news coverage here or in various newspapers, web & TV Channels, Ph- 9339228087, 6289583507 *Asish Basak* hellokolkata1@gmail.com
You may also like
Archives
Categories
- About Us
- Acting
- Albums & Series
- Art & Culture
- Art Expo
- Article
- Audio-Video Production
- Business
- Camera & Editing
- Communication Development
- Cooking
- Cooking Contest
- Daily English Newspaper
- Digital Media & Web Channel
- Education
- Fashion
- Fashion Show
- Festivals
- Film Festival
- Films
- Films & Series
- Films, Serials, Albums & Portfolio
- Health
- Hello Kolkata FAIR
- Hello Kolkata Ladies CLUB
- HRD & Training
- HRD & Training Courses
- LIONS Magnates & ROTARY Kasba
- Literature
- LIVE Program in TV Channel
- Media Reports
- Membership
- Music
- News
- News-reading, Reporting & Anchoring
- Other Activities
- Painting
- Poem
- Portfolio
- PR & Event Management
- Promotions & Event Management
- Publication
- Publication of Books
- Puja Parikrama
- Social Welfare
- Social Welfare Initiatives
- Socio-Cultural Welfare
- Sports
- Stage Show – Song, Dance & Recitation
- Story
- Technology
- Theme Making
- Theme Making of Pujas
- Travel & Tourism
- Uncategorized
- Various Events
- Wellness
Leave a Reply